সোনাগাজী প্রতিনিধি->>

সোনাগাজীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মিজানুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

পৃথক দুটি নামাজে জানাজায় কয়েক হাজার মুসল্লীর উপস্থিতিতে শোক ও শ্রদ্ধায় শনিবার রাত ১১টায় পারিবারিক কবরাস্থানে তাকে চিরনিন্দ্রায় সমাহিত করা হয়।

এর আগে রাত ১০টায় মনগাজী বাজার সংলগ্ন মাঠে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লীর উপস্থিতিতে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ১০টায় মরহুমের নিজ বাড়ির দরজায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা।

তার আগে রাত নয়টার দিকে এ্যাম্বুল্যান্সযোগে ডাক্তার মিজানুর রহমানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন, গ্রামবাসী সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লীরা গগন বিদারী কাঁদতে থাকে।

এসময় নির্মম এ হত্যাকান্ডে জড়িত খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে নেটিজেনরা সোচ্চার হয়ে উঠেন। খুনীদের প্রতি ক্ষোভ আর ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে।

গত শনিবার ৬ মে বিকাল চারটায় ঢামেকে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য; ফেনীর সোনাগাজীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমান (৪৫) কে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ৩১জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন তার সহোদর আবু তৈয়ব। সোনাগাজী মডেল থানার মামলা নং-১৪, তাং- ০৬-০৫-২০২৩খ্রিস্টাব্দ। শনিবার সকালে তিনি ২১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৮-১০জনের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি শরীফ উদ্দিন ওরফে জামাই শরীফ (৩৭) এবং তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বানু (৩০) কে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন। শরীফ একই গ্রামের হোসেন মেম্বার বাড়ির শাহাব উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার জানায়, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের মৃত জাকির উল্যাহর ছেলে মিজানুর রহমান গংদের সঙ্গে একই বাড়ির আবু তাহেরের ছেলে জসিম উদ্দিন গংদের ৭০ পয়েন্ট জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছে। শুক্রবার সকালে বাড়িতে আম পাড়াকে কেন্দ্র করে দু’পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। দুপুর ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে মিজি বাড়ির সামনে গেলে আবু তাহেরের ছেলে জসিম উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন সবুজ, আবুল খায়েরের ছেলে মাঈন উদ্দিন মামুন, মোহাম্মদ শরীফ, আবদুল শুক্কুরের ছেলে আজগর হোসেন, জসিমের ছেলে সমির উদ্দিন, জাকির হোসেন ও সবুজের ছেলে বাবলুর নেতৃত্বে ১৫-২০জন সন্ত্রাসী ডা. মিজানুর রহমানকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরতর আহত করে। তার উপর হামলার খবর শুনে তার তিন সহোদর আবদুল হাই, আবু তৈয়ব ও আবদুল গোফরান এগিয়ে এলে তাদেরকেও কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে তারা। স্থানীয়রা আহতদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে মিজানুর রহমানকে রাত ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মিজানুর রহমান মনগাজী বাজারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, ছাড়াইতকান্দি হোছাইনিয়া দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য এবং সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি গ্রামের কালা সোবহানের বাড়ির মৃত জাকির উল্যাহর ছেলে।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ খালেদ হোসেন দাইয়্যান বলেন, দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকীদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।