বিশেষ প্রতিবেদক->>

চলছে বিজয়ের মাস। এই মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের সময় কাটানো সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা। এদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তেমনি একটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফেনীর অপু চৌধুরীর কাঠের তৈরি বাড়ি।

মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত চিহ্ন নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই বাড়িটি। ইতিহাস, ঐতিহ্যে ভরপুর এ বাড়িটি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় অবস্থিত।

মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত পুরনো এই বাড়িটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন ঐতিহ্যপ্রেমীরা। দোতলা এই বাড়ির ভেতরে রয়েছে অপূর্ব কারুকাজ। প্রাচীন এই বাড়ির দেওয়ালের আনাচে-কানাচে আছে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। মিয়ানমার থেকে আনা মালামাল দিয়ে নির্মিত হয়েছিল বাড়িটি।

এ বাড়ির উত্তরাধিকারী অপু রঞ্জন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন আমজাদহাট ইউনিয়নের মধ্যে এই বাড়িটা সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কারণে পাক হানাদার ও রাজাকাররা বাড়িটিকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল। হামলার ঘটনার আগে টের পেয়ে সবাই সরে গিয়েছিল। ফলে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এত বছর পেরিয়ে গেলেও বাড়িটির পুনর্বাসন বা পুনর্নির্মাণের কোনো কাজ করা হয়নি। দোতলা বিশিষ্ট এই বাড়িটির ঘরে এখনো মানুষ বসবাস করে।

তিনি আরও বলেন, স্থাপনাটির বয়স দুইশো বছরেরও বেশি। আমার বাবা-চাচারা ছয় ভাই ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচ ভাই মিয়ানমারে কাঠের ব্যবসা করতেন। বাকি একজন দেশে থাকতেন। সেখান থেকে নদীপথে এই সমস্ত কাঠ এনে আমার বাবা এই স্থাপনা নির্মাণ করেন।

স্থাপনা দেখতে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থাপত্যটি আমজাদহাট ইউনিয়নের মধ্যে আছে, তা অনেকের অজানা। এই বাড়িতে প্রাচীন দুটি স্থাপনা খুবই চমৎকার।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ হোসেন বলেন, প্রাচীন স্থাপত্যটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে আছে। বাড়িটিকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

খেজুরিয়া মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি, এ বাড়িটি ফেনী জেলার প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানুক।

ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মোতালেব বলেন, এ বাড়ির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বাড়িটিকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের হাতে বিধ্বস্ত বাড়িটি সম্পর্কে জানবে।