শহর প্রতিনিধি->>

যৌন হয়রানির অভিযোগ দিতে যাওয়া এক স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেমর সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক উপপরিদর্শকের (এসআই)। এরপর প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে ওই শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন ফেনী জেলা পুলিশের ডিএসবি শাখার ওই এসআই মো. আলাউদ্দিন। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়া এবং অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর গর্ভপাত করার ঘটনার পর ওই নারীকে তালাক দেন এসআই। বিচ্ছেদের পর দীর্ঘদিন আলাদা থাকার পর ওই নারীকে কয়েক দফা ধর্ষণ করেন আলাউদ্দিন। এ ঘটনায় ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

গতকাল শনিবার (৩ নভেম্বর) সকালে ফেনী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন একটি বেসরকারি স্কুলের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। ঘটনায় এখনো গ্রেপ্তার হননি ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

মামলা বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালে একটি যৌন হয়রানির ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার হয় ফেনী মডেল থানার এসআই আলাউদ্দিনকে। এরপর শিক্ষিকার সঙ্গে এসআইয়ের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার সুবাদে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর এসআই আলাউদ্দিন প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের একটি কাজী অফিসে ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ে করলেও স্ত্রী মর্যাদা দিতেন না এসআই। স্ত্রীর মর্যাদা এবং সামাজিক স্বীকৃতির কথা বললে বিভিন্ন টালবাহানা দেখাতেন।

দাম্পত্য জীবন চলমান থাকা অবস্থায় ২০২১ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই নারী বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি জানালে রেগে গিয়ে এসআই আলাউদ্দিন তাঁকে মারধর করেন। এ ছাড়া ওষুধ সেবন পর গর্ভপাত করেন। এতে ওই নারীকে বাচ্চার মা হওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এই ঘটনার পর তিনি মানসিক এবং শারীরিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েন। পরে স্ত্রীর স্বীকৃতির জন্য বেশি চাপ দিলে এসআই আলাউদ্দিন বিগত ২১ সালের ৩ মার্চ চট্টগ্রামের সেই কাজী অফিসে গিয়ে তালাক দেন। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ না করে মানসম্মানের ভয়ে চুপ থাকেন ওই নারী।

কিন্তু গত এক থেকে দেড় মাস পর ওই শিক্ষিকাকে আবারও বিরক্ত করা শুরু করেন আলাউদ্দিন। এরই মধ্যে তাঁর সঙ্গে সকল যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেন ওই নারী। কিন্তু ওই নারী বাসা থেকে বের হলে তাঁর পেছনে বাইক নিয়ে ফলো করেন ওই আলাউদ্দিন। এরপর ওই নারীর ঠিকানা নেওয়া, কললিস্ট বের করা এবং রাস্তায় চলার সময় রিকশা থামিয়ে রিকশাওয়ালাকে গালমন্দ করেন। ওই নারীর বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকা শুরু করে এবং তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা ভেবে তিনি নিরুপায় ছিলেন।

চলতি বছরের ১২ নভেম্বর রাত ১০টার সময় জোর করে ওই নারীর শহরের বাসায় প্রবেশ করে নারীকে ধর্ষণ করেন আলাউদ্দিন। একপর্যায়ে বিষয়টি কাউকে বললে প্রাণে মারার এবং মোবাইলে ভিডিও তুলে সেটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। একইভাবে ২৩ নভেম্বর দুপুর ৩টায় ওই নারীর স্থানান্তরকৃত নতুন বাসার ১১ তলার ফ্ল্যাটে এসে জোর করে ঘরে ঢোকেন। এ সময় ভুক্তভোগী চিৎকার করলে গলা টিপে ধরেন এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে ফের ধর্ষণ করেন। এ সময় আত্মরক্ষার্থে ওই নারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে আবারও ধর্ষণের ঘটনা কাউকে বললে আবারও হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেন এসআই আলাউদ্দিন।

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমি একজন স্কুল শিক্ষিকা। তা ছাড়া বিবাদী একজন পুলিশ। মান-সম্মানের ভয়ে চুপ করে ছিলাম বলে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

বর্তমানে জেলা বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) কর্মরত আছেন এসআই আলাউদ্দিন। তাঁর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসবি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। এসআই আলাউদ্দিন বিশেষ ট্রেনিং আছেন। বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, এখন এটি আইনি প্রক্রিয়ায় চলবে।’

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এক নারী ধর্ষণের একটি মামলা করেছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জানতে চাইলে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল থোয়াই অং প্রু মারমা বলেন, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে আলা উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।