নিজস্ব প্রতিবেদক->>

চলতি রবি মৌসূমে ফেনীতে ৪৬ হাজার ৪৭৯ জন কৃষককে ৫টি প্রকল্প থেকে প্রণোদনা ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রণোদনা বাস্তবায়নের জন্য জেলায় কৃষি বিভাগ ৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্ধ পেয়েছে। এছাড়াও ৫ জেলা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে জেলার ৬টি উপজেলায় ৮৭৮টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে।

ইতোমধ্যে প্রণোদনা ও সহায়তা প্রাপ্ত কৃষকদের তালিকা চুড়ান্ত করে প্রকল্পের আওতায় বীজ ও সার বিতরণ শুরু করা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব প্রণোদনার শতভাগ কৃষকের হাতে হাতে পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। জেলায় সকল অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় নিয়ে আসতে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এবারই সরকার সর্বোচ্চ প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষকদের।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিগত রবি মৌসূমে ফেনীতে ২৯ হাজার কৃষককে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তু চলতি মৌসূমে ৪৫ হাজার কৃষককে ৩ কোটি ১৬ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। অথ্যাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসূমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৭০০ কৃষককে ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এসব প্রণোদনা কৃষকের হাতে পোঁছলে বাড়বে উৎপাদন। কমবে খাদ্য সংকট। টেকসই হবে খাদ্য নিরাপত্তা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রবি মৌসূমে গম, ভূট্টা, সরিষা, সূর্যমূখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেঁয়াজ, মুগ, মসুর ও খেসারী ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ কর্মসূচীর আওতায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলায় ১৯ হাজার ২০০ জন কৃষককে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এ প্রণোদনার আওতায় ২ হাজার ৫৬৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের জন্য সরকার বিনামূল্যে প্রায় ৩৮ দশমিক ৮৫০ মেট্টিক টন বীজ ও ৩৭৯ মেট্টিক টন সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে ৪শ বিঘায় গম চাষের জন্য প্রণোদনার বীজ ও সার করা হয়েছে। একই ভাবে ভূট্টা ৪৫০ বিঘা, সরিষা ১৩ হাজার ৫শ বিঘা, সূর্যমূখী ২ হাজার ৯শ বিঘা, মুগ ৫শ বিঘা, মসুর ৩৫০ বিঘা, খেসারী ৭৫০ বিঘা চাষাবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ শেষ হয়েছে। তবে আবহাওয়া ও আমন ধান কাটা শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্পের চিনাবাদাম এবং সয়াবিনের বীজ ও সার ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিতরণ করা হবে। বিগত মৌসূমে এ প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৭৯০০ কৃষককে ৭০ লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়। কিন্তুু চলতি মৌসূমে তা বাড়িয়ে ১৯২০০ জন কৃষককে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। প্রণোদনার আওতায় চলতি মৌসূমে জমির পরিমান বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫১২ হেক্টর।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, তৈল জাতীয় ফসল বৃদ্ধির আওতায় প্রত্যেক গম চাষিকে ২০ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে ভূট্টা চাষের জন্য প্রতি কৃষককে ২ কেজি বীজ ও ৩০ কেজি সার, সরিষার জন্য ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার, সূর্যমূখীর জন্য ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার, চিনাবাদামের জন্য ১০ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার, মুগের জন্য ৫ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার, মসুরের জন্য ৫ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার, খেসারীর জন্য ৮ কেজি বীজ ও ১৫ কেজি সার বিনামূল্যে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে ২০২২-২৩ রবি মৌসূমে উফশী জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় জেলায় ৮হাজার ৪শ জন কৃষককে ৫১ লক্ষ ৩ হাজার টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। জেলায় ১ হাজার ১২৪ হেক্টর জমি আবাদের জন্য ৪২ মেট্টিক টন বীজ, ১৬৮ মেট্টিক টন সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। উফশী জাতের ধান আবাদের জন্য নির্বাচিত কৃষকদের জনপ্রতি ৫ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার দেয়া হবে। বিগত মৌসূমে এ প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৪ হাজার কৃষককে সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু চলতি মৌসূমী তা দ্বিগুন করে ৮ হাজার ৪শ জনকে এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ সহায়তা কৃষকদের মাঝে পৌঁছানো হবে।

এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে বোরো ধানের হাইব্রীড জাতের বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জেলায় ১৮ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৪০৮ হেক্টর জমি চাষাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ৯৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ওই বরাদ্ধ থেকে তালিকাভূক্ত কৃষকদের জনপ্রতি ২ কেজি করে মোট ৩৬ মেট্টিক টন ধানের বীজ বিনামূল্যে দেয়া হবে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এ বীজ হাতে পেয়েই কৃষকরা আগামী মৌসূমের জন্য বীজতলা তৈরীর কাজ শুরু করবে।

অপর একটি প্রকল্পের আওতায় ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় ৫০ একর আয়তনের একটি জমিতে সমলয়ে চাষাবাদ ব্লক প্রদর্শণী স্থাপনের নিমিত্ত কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ওই কর্মসূচীতে সরকারী ভাবে ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার সম্ভাব্য ব্যয় বিভাজন করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

অন্যদিকে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, রবি মৌসূমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ফেনীতে তৈল, মসলা ও সবজি জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ৮৭৮টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তন্মধ্যে ৬০টি বোরো ধান, ৩৫টি গম, ৪টি বার্লি, ৯৫টি ভূট্টা, ৮১টি সরিষা, ৩২টি চিনাবাদাম, ২০টি সয়াবিন, ১০২টি সূর্যমূখী, ৫০টি মসুর, ১৫টি খেসারী, ৮৫টি ফেলন, মুগ ২৬, পেয়াজ ২০, রোশন ১৫, মরিচ ৩০, তরমুজ ২৫, সর্জন ১০, সবজি ৪১, জৈব কৃষি ৫৮, আইল ফসল ৩৫, ভার্মি পোস্ট ২৬ ও ট্রাইকো কম্পোস্ট ১৩টি প্রদর্শনী রয়েছে। দেশের উৎপাদনে নতুন আবিস্কৃত জাত সম্পর্কে কৃষককে ধারণা দেয়া ও এসব জাত উৎপাদনে আগ্রহী করে তুলতেই এসব প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রদর্শনীতে কৃষকরে জমি ছাড়া বীজ, সার ও আনুসাঙ্গিক সকল ব্যয় প্রকল্প থেকে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রদর্শনীর উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করে কার্যক্রম শুরু করেছেন।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ইকরাম উদ্দিন জানান, দেশে খাদ্য ঘাটটি নিরসন ও মজুদ নিশ্চিত করণের জন্য সরকার ফসল উৎপাদনে এবার ব্যাপক প্রণোদনা ও সহায়তা কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ এবং ৫ জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনীসহ জেলায় অন্তত ৪৭ হাজার কৃষককে সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতাভূক্ত করা হয়েছে। জেলায় বরাদ্ধের অনুকূলে প্রাপ্ত প্রণোদনা থেকে ১৯২০০ কৃষককে তৈল জাতীয় ফসলের বীজ ও সার, ১৮ হাজার কৃষককে হাইব্রীড জাতের বীজ, ৮ হাজার ৪শ জন কৃষককে উফশী জাত চাষাবাদের জন্য বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও দাগনভূঞায় ৫০ একরের অখন্ড জমিতে সমলয়ে চাষাবাদের ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।