বিশেষ প্রতিনিধি->>

প্রবেশ পথে ঝোপঝাড়। চারতলার ছাত্রাবাস ভবনের ভেতরে ও দরজা-জানালায় জমে আছে ময়লারস্তর। ভেতরে উঁকি দিলে পাওয়া যায় উৎকট গন্ধ। প্রায় তিন বছর ধরেই ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের এমন দুরবস্থা। করোনার প্রকোপ কমার পর কলেজের কার্যক্রম চালু হলেও বন্ধ আছে ছাত্রাবাসটি। তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ।

ছাত্রাবাসটি ঘুরে দেখা গেছে, পৌর শহরের হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন সড়কের পাশে একটি টিনশেডের সাইনবোর্ড আছে। দীর্ঘদিন যাতায়াত না থাকায় প্রবেশমুখে সড়কের ওপর ময়লা ফেলেন আশপাশের লোকজন। একই সঙ্গে ঝোপঝাড়ে ভরা সড়কটি। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ঝড়ো হাওয়ায় একটি গাছ হেলে পড়ে আছে। মূল ফটকে ঝুলছে তালা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভেতরের করুণ দশা কথা। তারা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ পড়ে থাকায় চৌকি, চেয়ার, টেবিল, পানির ট্যাব ও শৌচাগার সব নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এখানে চারতলা ভবনের প্রতিটি তলায় ৯টি করে রুম আছে। প্রতি রুমে ৪ জন করে থাকতে পারে। পুরো ভবনে থাকার আসন আছে ১০৮টি। করোনাতে বন্ধ হওয়া ছাত্রাবাস খুলার কোনো উদ্যোগ নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের। তাই আবাসন থেকেও সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, ২০১৬ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদের আদেশে তখনকার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোক্তার হোসেনকে ছাত্রাবাসের সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত ওই পদে থাকলেও কখনো সেখানে যাননি। বর্তমানে তিনি পদোন্নতি পেয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ। এরপর ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আফতাব উদ্দিনকে নির্বাহী আদেশ সুপারের দায়িত্ব দেন বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল। তার সঙ্গে ছাত্রাবাস পরিচালনা কমিটিতে সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আলম ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শরীফুল ইসলাম আছেন।

প্রফেসর মোক্তার হোসেন জানান, তাকে সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও কোনো কাগজপত্র বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এজন্য তিনি কখনো সেখানে যেতে আগ্রহ পাননি।

মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর অধ্যক্ষ ও কমিটির সদস্যদের নিয়ে দুইবার ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেছি। বিদ্যুৎ আর গ্যাস বিল বাবত প্রায় চার লাখ টাকার মতো বকেয়া পড়ে আছে। ছাত্রাবাসের অবস্থা খুবই নাজুক। ছাত্রাবাসটি পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে সংস্কার করা জরুরি। শুধু তাই নয়, পুরো ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামতের আগে কোনো শিক্ষার্থী উঠানো যাবে না। সার্বিক বিষয় অধ্যক্ষ স্যারকে জানানো হয়েছে।

একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনেকে বাড়তি খরচ দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে কয়েকজন সহপাঠীসহ থাকছেন। খাবার ও থাকা মিলিয়ে গড়ে তাদের খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। অথচ ছাত্রাবাসে থাকলে তাদের খরচ হতো তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

ফেনী কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি নোমান হাবিব বলেন, ছাত্রাবাস চালু না থাকায় দূর-দূরান্তের ছাত্ররা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এরই মধ্যে বিষয়টি সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ফেনী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহম্মদ তপু বলেন, করোনার সময় বন্ধ করা হলেও বর্তমানে সবকিছুই চালু আছে। অথচ ছাত্রাবাস চালু না করা দুঃখজনক। থাকার উপযোগী ছাত্রাবাস চালু থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ পাবে।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল বলেন, ছাত্রাবাস সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে কলেজ প্রশাসন ছাত্রাবাস সংস্কার করে চালুর উদ্যোগ নেবে।