বিশেষ প্রতিবেদক->>

ভাগ্য ফেরাতে লিবিয়ায় গিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার যুবক জনি মোল্যা। মুক্তিপণ দাবি করে প্রতিদিনই তাকে মারধর ও নির্যাতনের দৃশ্য মা-বাবাকে দেখানো হচ্ছে ভিডিও কলে। ছেলেকে বাঁচাতে মুক্তিপণের টাকা পাঠালেও এখন আরও টাকা দাবি করার পাশাপাশি নির্যাতনের মাত্রাও বাড়ানো হয়েছে।

ভয়ংকর নির্মম নির্যাতনের এক ভিডিও, যা দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। প্রতিদিন দুপুরে ভিডিও কল করা হয় মা-বাবার কাছে। পরিবারের কাছে লাখ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চাদঁপুর গ্রামের লিবিয়াগামী যুবক জনি মোল্যার পরিবারের কাছে। অসহায় গরিব পরিবারটি মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিদিন চলছে তার ওপর নির্মম নির্যাতন। অসহায় পরিবারের করুণ আর্তনাদে কাঁদছেন এলাকাবাসী।

ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত আট মাস আগে লিবিয়ার উদ্দেশে পাড়ি জমান জনি। তবে সেখানে ২১ দিন ধরে মানব পাচারকারী এক চক্রের কবলে পড়েছেন এই যুবক। জনিকে বেঁধে মারধরের ভিডিও প্রতিনিয়ত পরিবারের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। তাদের পাঠানো একটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠানোর পর আরও টাকা চাওয়া হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। অন্যথায় জনিকে হত্যা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে।

ছেলেকে বাঁচাতে অবশেষে থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযোগ পেয়ে ফেনী থেকে এই চক্রের এক সদস্য মাহাবুবুর রহমান ভুঁইয়া রাজীবকে গ্রেফতার করে পুলিশ, যার অ্যাকাউন্টেই জনির বাবা মুক্তিপণের টাকা পাঠিয়েছিলেন। এই রাজীব মানব পাচারকারী চক্রের মাস্টারমাইন্ডদের একজন। তার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক রকমের লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে রাজীবকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

এদিকে মামলা করায় জনির ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। এখন তাদের দাবি, মামলা তুলে নিতে হবে নতুবা ৬০ লাখ টাকা দিতে হবে জনিকে বাঁচাতে। একই সঙ্গে জনির বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে জেলার মধুখালী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, গত ২৯ জুলাই এ নিয়ে একটি মামলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে যে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছিল তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডি এবং ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর (এনসিবি) কাছেও সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা এবং জনিকে উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।