ফুলগাজী প্রতিনিধি->>

ফুলগাজীতে মো. আবুল কালাম (৩০) নামের এক লেবাননপ্রবাসীকে তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তার (২৫) বিষপান করিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। গত বুধবার লেবানন থেকে ফেরার পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আবুল কালাম উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের তারাকুছা গ্রামের সৈয়দ আহমদের ছেলে।

শনিবার লেবাননপ্রবাসী মো. আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আবুল কালাম প্রায় আট বছর আগে পরিবারের অভাব দূর করতে লেবাননে পাড়ি জমান। দীর্ঘ আট বছর তিনি লেবাননে কাটিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে লেবাননে থাকাকালীন পরশুরাম উপজেলার শালধর গ্রামের আবদুল কাদেরের মেয়ে জেসমিন আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে তাঁর বিয়ে হয়। জেসমিন আক্তার চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন এবং চট্টগ্রামে থাকেন। ২৬ জুলাই আনুমানিক রাত ৮টায় আবুল কালাম বাংলাদেশে আসেন। সেই সুবাদে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামেন এবং সেখান থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাঁর স্ত্রী ও ভায়রা বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করেন। একই দিন রাত ২টায় চট্টগ্রামের কদমতলী থেকে নিউ মুক্তা নামে একটি লোকাল গাড়িতে তাঁকে উঠিয়ে দেন। গাড়ি ছাড়ার পাঁচ মিনিট পর আবুল কালামের বাবার কাছে পাশের সিটে বসা এক যাত্রী ফোন করে বলেন, আবুল কালাম বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। পরে ভোর ৪টায় ফেনীর মহিপাল থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করার পর তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি দেখে প্রথমে তাঁকে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান।

পরে ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবুল কালাম। এ ঘটনায় আবুল কালামের মামা আব্দুল আলীম বাদী হয়ে ফুলগাজী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।

মামলার বাদী আব্দুল আলীমের কাছে জানতে চাইলে অভিযোগ করে জানান, তাঁর ভাগনে কালাম বিদেশ থেকে আসার সময় পরিবারের সবাইকে বলেছিলেন তাঁকে রিসিভ করতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পরে তিনি আবার ফোন করে বলেছেন কাউকে যেতে হবে না, তাঁর স্ত্রী ও ভায়রা তাঁকে রিসিভ করবে। তাঁর সঙ্গে মালামালসহ তিনটি লাগেজ ও টাকা ছিল। এর মধ্যে দুটি লাগেজ ও টাকা তাঁর স্ত্রী রেখে দিয়েছেন। পরে আবুল কালামের মৃত্যুর খবর শোনার পরও স্ত্রী তাঁকে দেখতে আসেনি। মৃত্যুর খবর শোনার পর তাঁর স্ত্রীকে অনেকবার ফোন করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তাই পরিবারসহ সবার সন্দেহ খাবারের সঙ্গে বিষজাতীয় কিছু মিশিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আবুল কালামকে যখন ফেনীর মহিপাল থেকে রিসিভ করা হয় তখনো অজ্ঞান ছিলেন। আট বছর পর দেশে ফিরেও পরিবারের কারও সঙ্গে শেষবারের মতো একটু কথা বলতে পারেননি তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফুলগাজী থানার উপপরিদর্শক আক্তার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লেবাননপ্রবাসী মো. আবুল কালামের মৃত্যুতে তাঁর মামা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সেটার ওপর ভিত্তি করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছে কি না, তা ওই প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে। তাঁর আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।’