বিশেষ প্রতিবেদক->>

ফেনীতে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। গত ৪ মাসে জেলার ছয় উপজেলায় অন্তত ২১ জন আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ১৪ জন নারী আর ৭ জন পুরুষ।

পুলিশের ভাষ্য মতে, এসব আত্মহত্যার বেশিরভাগই ঘটেছে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক এবং এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক কলহের কারণে।

ফেনীর পুলিশ জানিয়েছে, ফেনীতে গত ৪ মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত) যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের প্রায় সবাই যুবক-যুবতী। এদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ১৯ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। আর বাকিরা ৩৫ বছরের মধ্যে।

এসব আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক কলহ ও বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে প্রেম, অভিমান ও ক্ষোভের কারণেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, জীবনের সোনালী সময়ে মান-অভিমান করে অনেকেই নিজেকে খুন করার পথ বেঁচে নিচ্ছে। যা সমাজের চোখে ঘৃণিত।

ফেনী শহরের নাজির রোডের বাসিন্দা দুলাল তালুকদার বলেন, ‘পারিবারিক জীবনে কলহ থাকবেই। সে সব সমস্যা সমাধান করে চলতে হবে। যারা আতহত্যার পথ বেঁচে নেবে তারা সমাজ ও ইসলামের চোখে অপরাধী।’

পাঠান বাড়ি রোডের বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, ‘আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে মেরে ফেলা। এটি কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। দিন দিন বাড়ছে এই প্রবণতা।’

দাগনভূঞা থানার ওসি হাসান ইমাম বলেন, ‘দাগনভূঞায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছে। অথচ মেয়েটির ভালোমন্দ বুঝারই বয়স হয়নি।’

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘‘আত্মহত্যা একটি অপরাধ। ফেনীর অসংখ্য মানুষ প্রবাসী। কিছু প্রবাসীর স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে হয়ে একসময় পারিবারিক কলহে লিপ্ত হয়। অশান্তি চরমে পৌঁছালে একসময় আত্মহননের পথও বেছে নেয় অনেকে।’

এদিকে আত্মহত্যার প্রবণতা বিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জাকারিয়া সিদ্দিকী বলেন, ‘আত্মহত্যা একটি মানসিক রোগ। বেশিরভাগ আত্মহত্যা ঘটে থাকে বিষন্নতা, দারিদ্রতা, মাদক সেবন, বেকারত্ব ও সামাজিক নানা অস্থিরতা থেকে। ঈদানিং বয়সন্ধিকালেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।’

তিনি জানান, আত্মহত্যার প্রবণতা কমানোর প্রধান উপায় হচ্ছে পারিবারিক সচেতনতা। এ ছাড়া যার মধ্যে এমন অস্থিরতা দেখা যাবে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা বলেন, আত্মহত্যার পথ বেছে না নিয়ে সরাসরি পুলিশ কিংবা ট্রিপল-নাইনে ফোন করে যে কেউ সহযোগিতা পেতে পারে।