বিশেষ প্রতিবেদক->>

নিলয়ের পাখি পোষার শখ। সেই শখ থেকে বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে দুটি শালিক পাখির বাচ্চা নিয়ে আসেন বাড়িতে। বাচ্চা দুটিকে নিলয় খাবার দেন, গোসল করান। ধীরে ধীরে পাখি দুটি বড় হতে থাকে। কিন্তু কয়েক মাস যেতেই একটি পাখি মারা যায়। তবে অন্য পাখিটি বর্তমানে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে। সবাইকে নাম ধরে ডাকতে পারে। ক্ষুধা লাগলে বলে, ‘খাবার দাও।’ অপরিচিত কাউকে দেখলে বলে, ‘এটা কে?’ দুই বছরে পাখিটি পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেছে।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার নাজমুল হাসান ওরফে নিলয় শালিক পাখি পুষে কথা শিখিয়েছেন। পাখিটিকে তিনি ‘নিলয়’ নামেই ডাকেন। শালিকটি তাঁর পরিবারের সবার ঘাড়ে চড়ে বেড়ায়। গাছের ডালে নয়, শালিকটি বাসা বেঁধেছে মানুষের ঘরে। নিলয় ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার যত আহ্লাদ! সারাক্ষণ নিলয়ের সঙ্গী। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে বেড়ানো—সবকিছুই হয় নিলয় ও তাঁর ছোট ভাই নীরবের ঘাড়ে বসে। নিলয় পৌর শহরে ব্যবসা করেন।

পাখি পালনের বিষয়ে নিলয় বলেন, বাড়িতে বেশ কয়েক জোড়া কবুতর পালতেন তিনি। এ জন্য পাখির প্রতি আলাদা ভালো লাগা কাজ করে তাঁর। করোনায় লকডাউনের সময় ইউটিউবে ভিডিও দেখতেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে একদিন ইউটিউবে শালিক পাখি পোষ মানানোর একটি ভিডিও দেখেন। সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে দুটি শালিক পাখির বাচ্চা বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাকে খাবার খাওয়ান, গোসল করান। ধীরে ধীরে পাখি দুটি বড় হতে থাকে। কয়েক মাস পর একটি পাখি মারা যায়। তখন খুব কষ্ট হয়েছিল তাঁর। অপর পাখিটি বড় হতে থাকে এবং পোষ মানে।

সম্প্রতি উপজেলার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকায় নিলয়ের বাড়ির আঙিনায় তাঁর সঙ্গে দেখা হলে কথা হয়। তখন একটি শালিক পাখি তাঁর ঘাড়ের ওপর বসে খুনসুটি করছিল। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, নিলয়ের শোবার ঘরে পড়ার টেবিলের পাশে একটি খাঁচা। পাখিটি একবার নিলয়ের ঘাড়ে এসে বসছে, আবার খাঁচায় গিয়ে বসছে।

নিলয় জানালেন, তাঁদের চার সদস্যের পরিবার। মা–বাবা আর দুই ভাই। পাখিটি নিলয়ের মাকে ‘আম্মা’ বলে ডাকে। আর অন্যদের নাম ধরে ডাকে। ‘মা’ ডাকতে পারে। ‘আল্লাহ’ বলতে পারে। পাখির ক্ষুধা লাগলে বলে, ‘ক্ষুধা লেগেছে, খাবার দাও।’ অপরিচিত কাউকে দেখলে বলে, ‘এটা কে?’ এভাবে মোটামুটি দুই বছরে পাখিটি অনেক ধরনের কথা শিখেছে। তাঁদের কাছে পাখিটি পরিবারের সদস্যদের মতো বড় হচ্ছে।

নিলয় আরও বলেন, ‘কয়েক মাস আগে বাড়ির পাশের এক ছেলে পাখিটি ধরে অন্য আরেকজনের কাছে দেড় শ টাকায় বিক্রি করে দেন। দীর্ঘক্ষণ পাখিটি না পেয়ে পরিবারের সবাই মিলে তাকে খুঁজতে থাকি। এলাকার অনেকেই পাখিটির বিষয়ে জানেন। তাই বিভিন্নজনকেও ফোন দিয়ে পাখির খবর নিই। এ সময় একজনের মাধ্যমে জানতে পারি, পাখিটি ধরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে ওই বাড়িতে যাই। পাখিটি আমাকে দেখামাত্র “নিলয়, নিলয়” বলে ডাকতে শুরু করে। ওই ক্রেতাকে বুঝিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে পাখিটি আবার বাড়িতে আসি। পাখিটি পাওয়ার পর পরিবারের সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।’

পাখিপ্রেমিক নিলয় বলেন, ‘পাখিটা আমার প্রাণ। পাখিটি যেখানেই থাকুক না কেন, নিলয় বলে ডাক দিলে একনিমেষে হাজির হয়ে যায়। ভবিষ্যতে তিনি আরও কয়েকটি অন্য প্রজাতির পাখি পালন করবেন।’

নিলয়ের ছোট ভাই নীরব বলে, ‘নিলয় ভাইয়া পাখির প্রতি খুবই দুর্বল। তাঁর পাখিপ্রেম দেখে খুবই ভালো লাগে। বাড়িতে কারও নাম ধরে ডাকলে পাখিটিও অনুকরণ করে ডাকে। এটা দেখে সবাই আনন্দ পায়।’

নিলয়ের মা বলেন, পশুপাখি নিলয়ের খুব পছন্দ। পাখিটি কথা বলে, শুনতে খুবই ভালো লাগে। ঘরের মধ্যে পাখি থাকলেও তাঁদের কোনো সমস্যা হয় না, বরং ভালোই লাগে। দুই বছরে পাখিটিও পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে।