লোকমান হোসেন->>
দূর্দশার আরেক নাম ফুলগাজীর হাজির ভাগনা। প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ঠায় দাড়িঁয়ে আছে হাজির ভাগনা নামক স্থানের পাটাতন বিহীন সেই ব্রিজটি। ফলে অত্র অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তি আর দূর্দশার শেষ নেই। ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ ধর্মপুর গ্রামের ঠিক মধ্যখানে ব্রিজটি অবস্থিত। ভৌগলিক কারণে এই ব্রিজটি অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।
আমজাদহাট ইউনিয়নের সাথে ফুলগাজীর মুন্সীরহাট ইউনিয়ন, দরবারপুর ইউনিয়ন, জিএমহাট ইউনিয়ন, ফুলগাজী উপজেলা ও জেলা শহর ফেনীর সাথে যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হল আমজাদহাট- ইসলামীয়া বাজার- ঘাটঘর-মুন্সীরহাট। এভাবে রাস্তাটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে মিলেছে। মুহুরী নদীর পূর্বাঞ্চল আমজাদ হাট ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এই পথে চলাচল করে। এছাড়া ব্রিজটির পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আলহাজ্ব ডিগ্রী কলেজ, ধর্মপুর এডুকেশনাল স্টেট ও দেবপুর ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসা। এবং পশ্চিমে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঘাটঘর মাদ্রাসা। ব্রিজটি সংকার বা পূর্ণনির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসী ও হাজার হাজার শিক্ষাথীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আমজাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাওলানা ইব্রাহীম জানান, জুরুরী প্রয়োজনে জেলা সদরের যোগাযোগ করতে হলে এখানকার লোকজন এবং শিক্ষার্থীদেরকে (যারা ফেনী শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে) বিকল্প পথ আমজাদহাট- চাঁদগাজী-ছাগলনাইয়া হয়ে প্রায় ২২-২৩ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে অথবা আমজাদহাট-মনিপুর-জগৎপুর-মুন্সীরহাট হয়ে প্রায় ২০-২১ কি.মি. পাড়ি দিয়ে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। এতে তাদের সময় ব্যয় হয় দেড় থেকে দুই ঘন্টা। খরচও পড়ে বেশি। কিন্তু আমজাদ হাট-ইসলামীয়া বাজার-ঘাটঘর হয়ে ফেনী যেতে সময় ও খরচ লাগবে অর্ধেকের চেয়েও কম।

সরজমিনে দেখা যায়, হাজীর ভাগনা স্থানে দুটো নৌকায় লোক পারাপার করছে ৭ম শ্রেণীর ছাত্র দাউদ ও পঞ্চশার্ধ্বো বৃদ্ধ ফজলুল হক। তারা জন প্রতি ৫টাকা করে দৈনিক কয়েকশো লোক পারাপার করেন। ফজলুল হক বলেন- প্রায় ৩০ বছরের বেশী সময় ধরে এভাবেই ব্রীজটিকে দেখছেন। ব্রীজটি নির্মাণের সময় তিনি শ্রমিকের কাজও করেন বলে জানান।
পেয়ার মিয়া (৪২) নামে এক যুবক বলেন ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার যাতায়াতের প্রায় সবগুলো রাস্তা, পুল, কালর্ভাট নির্মিত হলেও হাজীর ভাগনা ব্রীজ নির্মাণের অভাবে অঞ্চলের লোকজনের দূর্দশার শেষ নেই।
এ সময় কথা হয় ধর্মপুর এডুকেশনাল স্টেটের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না নিগার ও দশম শ্রেণীর ছাত্রী ইসরাত জাহান ইকার সাথে। তাদের বাড়ী দক্ষিণ ধর্মপুর নদীর কূলে। তারা বলেন- এখানে সবসময় নৌকা থাকে না। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকলে তখন তাদের ক্ষেত্রের আইল ধরে মাঠ ঘুরে স্কুল যেতে হয়। তারা আরও বলেন- একই গ্রামে স্কুল থাকার পরও শুধু ব্রীজটির কারণে তাদের এলাকার বহু শিক্ষার্থী বসিকপুর হাই স্কুল ও জগতপুর হাই স্কুলে পড়াশুনা করে।
জানা যায়- ১৯৭৯-৮০ সালে লে.কর্ণেল (অবঃ) জাফর ইমাম বীরবিক্রম যোগাযোগ মন্ত্রী থাকা কালীন ব্রীজটি নির্মাণ হয়। (তবে এলাকার বয়স্ক ব্যক্তিরাও ব্রীজ নির্মাণের সঠিক সময় বলতে পারেনি) তখন ব্রীজটির উপর কাঠের পাটাতন লাগানো হয়। এরপর বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে কাঠের পাটাতন ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়।
২০০১-২০০৫ এ তৎকালীন বিএনপি ও জোট সরকারের আমলে মরহুম মেজর (অবঃ) সাঈদ এস্কান্দারের (সাবেক এমপি) ডিও লেটার ইস্যু এবং যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের বারবার তাগাদা দেয়া ও পরবর্তীতে গুণিজন সাংবাদিক মরহুম এবিএম মুসা আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বে ও ব্রীজটি নির্মাণ হয়নি।
২০০৮ সালে এ নিয়ে দৈনিক মানব জমিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে করে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলী ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলে ব্রীজের উপর বাঁশের পাটাতন লাগনো হয়। এতে করে ঐ অঞ্চলের লোকজনের দূর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়। কিন্তু কয়েক বছর পর সেই বাঁশের পাটাতন নষ্ট গেলে স্বরুপে ফিরে ব্রীজটি।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম মজুমদার ব্রীজটি নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে ফেনী-১ (ফুলগাজী-পরশুরাম-ছাগলাইয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার জানান ,ব্রীজটির নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অক্টোবরে ব্রীজটির ডিজাইন হবে এবং আগামী বছর ব্রীজটির কাজ শুরু হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।