বিশেষ প্রতিনিধি->>

সোনাগাজী উপজেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যৌথভাবে এটি নির্মাণ করবে সরকারি সংস্থা ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) ও জাপানের মারুবেনি করপোরেশন। ২০২৬ সালের জুনে এটিতে উৎপাদন শুরু হতে পারে। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইজিসিবি ও মারুবেনি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

ইজিসিবির পক্ষে কোম্পানি সচিব কাজী নজরুল ইসলাম ও মারুবেনির পক্ষে মারুবেনি এশিয়ান পাওয়ার সিঙ্গাপুর লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মারো শিনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ইজিসিবির চেয়ারম্যান এস এম এনামুল কবির।

সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় সরকারি মালিকানাধীন ইজিসিবি এবং জাপানের মারুবেনি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তি অনুসারে দুই কোম্পানির অংশীদারত্বে গঠিত হবে ‘ফেনী সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’। এতে দুই কোম্পানি সমান বিনিয়োগ করবে। একই এলাকায় আরও তিনটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে ইজিসিবি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান।
ইজিসিবি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

স্বাগত বক্তব্যে তিনি জানান, সরকারের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে অবদান রাখা এবং পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানের সঙ্গে সংগতি রেখে ইজিসিবি প্রচলিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বৃহৎ সৌর ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইজিসিবি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে প্রায় এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করে।

তিনি বলেন, অধিগ্রহণ করা ভূমিতে ইজিসিবি বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৭৫ মেগাওয়াাট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় একটি ২৩০ কেভি ১৩.৩ কিমি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে, যা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিতব্য বিদ্যুৎ ঢাকা ও চট্টগ্রাম লোড সেন্টারের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার নিকটবর্তী মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে সরবরাহ করবে। চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ ৭৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলেও জানান ইজিসিবি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, বিশ্বের সুখ্যাতি-সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইজিসিবিকে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী যৌথ উদ্যোগে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চার পার্টনার নির্বাচনের জন্য ইজিসিবি আগ্রহ ব্যক্তকরণের (ইওআই) আহ্বান জানায়। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাপানের মারুবেনি করপোরেশকে পার্টনার হিসেবে নির্বাচন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ইজিসিবি এবং মারুবেনি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি) এ প্রকল্পের ট্যারিফ অনুমোদন করে।

তিনি আরও বলেন, ইজিসিবি এবং মারুবেনির মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে জয়েন্ট ভেঞ্চার অ্যাগ্রিমেন্ট প্রস্তুত করা হয় এবং অনুমোদনের লক্ষ্যে তা বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হয়। ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কেবিনেট সভায় এ জয়েন্ট ভেঞ্চার অ্যাগ্রিমেন্ট অনুমোদন হয়। জয়েন্ট ভেঞ্চার অ্যাগ্রিমেন্টের আলোকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলো পরিদফতরে (আরজেএসসি) ফেনী সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠিত হবে। প্রকল্পের পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (আইএ) স্বাক্ষরিত হলে, আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

২০২৬ সালের জুন মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব এ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য নির্ধারিত সরকারের ন্যাশনালি ডিটারমাইনড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং জ্বালানি বহুমুখীকরণে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানে মারুবেনি এশিয়ান পাওয়ার বাংলাদেশ লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিগেরু নাগাশিমা বলেন, মারুবেনি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৬ দশমিক ৪ গিগাওয়াট (প্রায় ১১ দশমিক ৫ গিগাওয়াট নেট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান রেখেছে। এর মধ্যে প্রায় ২ দশমিক ৮ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে উৎপাদন করা হয়েছে। তা ছাড়াও ইজিসিবির আওতাধীন হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে মারুবেনি কাজ করেছে। টেকসই উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মারুবেনি করপোরেশন বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি।