পরশুরাম প্রতিনিধি->>

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর খাবারে অর্থ বরাদ্দ বাড়লেও মান বাড়েনি। রোগী এবং তাদের অভিভাবকরা এমন অভিযোগ তুলেছেন।

তারা অভিযোগ করেন, রোগীর খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নানা উপায়ে বিভিন্ন স্তরে কারচুপি হয়ে থাকে। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে শুরু করে কয়েক পর্যায়ে নানাভাবে এ লুটপাটের কাজ চলে। নিম্নমানের খাবার উপকরণ ক্রয় করা হয়। ডালের সঙ্গে বেশি পরিমাণ পানি মেশানো থাকে। নির্ধারিত পরিমাণের এক টুকরো মাংসকে করা হয় কয়েক টুকরো।
 
পরশুরাম সরকারি হাসপাতালের হিসাব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি বাজেটের তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। পুরনো বাজেট দিয়ে ভাল মানের খাবার দিতে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যেও রোগীদের জন্য ভাল খাবার দেয়া হয়ে থাকে বলে দাবি করেন তারা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বর্তমানে পরশুরাম সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রতি রোগীর খাবারের জন্য দৈনিক বরাদ্দের পরিমাণ ১২০ টাকা। হাসপাতালগুলোতে খাবারের মান বাড়াতে শয্যাপ্রতি দৈনিক বরাদ্দের এই টাকা বৃদ্ধি করে আওয়ামী লীগ সরকার। 

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে কয়েক শ’ রোগীকে চার বেলা খাবার দিতে হয়। প্রত্যেক রোগীকে সকালে ৪ পিস রুটি, ১টি ডিম, ১টি কলা দেয়া হয়। দুপুরে পরিবেশন করা হয় ভাত, মাংস, সবজি ও ডাল। বিকেলের নাস্তার তালিকায় থাকে বিস্কুট অথবা রুটি ও কলা। আর রাতের খাবার তালিকায় থাকছে মাছ, ১টি ডিম, সবজি ও ডাল। প্রত্যেক রোগীকে এসব মেন্যু দিতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। 

রোগীপ্রতি দৈনিক বরাদ্দের টাকা বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। দৈনিক ১২০ টাকায় একজন রোগীকে চার বেলা মানসম্মত খাবার দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মানসম্মত খাবার না দিলেও রোগী ও অভিভাবকদের সমালোচনায় পড়তে হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন কোন ফান্ড নেই, যা থেকে এই ভর্তুকি দেয়া যায়। সরকারের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। নির্ধারিত শয্যা সংখ্যার বাইরে চিকিৎসাধীন ২শ’ থেকে ৩শ’ রোগীকেও খাবার ও ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়। এর আগে অতিরিক্ত রোগীদের খাবার সরবরাহ করা হতো না বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

কিন্তু হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরিবেশিত খাবার দেখে এবং ভর্তিকৃত রোগীদের সাথে কথা বলে বাস্তবে তালিকাভুক্ত খাবারের মান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবিকৃত মানের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। এই ধারাবাহিকতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।  

অফিস সহকারী ইসমাইল জানান, রোগীপ্রতি বরাদ্দ ১২০ টাকায় মানসম্মত খাবার দেয়া হচ্ছে। এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৪/৫শ’ রোগীকে চার বেলা খাবার দিতে হয়। প্রত্যেক রোগীকে প্রতিদিন সকালের নাস্তা হিসেবে ৫ পিস পাউরুটি, ১টি ডিম, ১টি কলা দেয়া হয়। দুপুরে পরিবেশন করা হয় ভাত, মাছ, সবজি ও ডাল। বিকেলে দেয়া হয় ছোট প্যাকেটের বিস্কুট এবং রাতের খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল। কিন্তু তার এই দাবিকৃত অবস্থারও বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। 

ভর্তিকৃত রোগীরা জানায়, সকালে অনেক সময় ডিম দেয়া হয়না। অন্য যেসব নাস্তা দেয়া হয় তাও মানসম্মত নয় এবং বিকেলে কোন নাস্তা দেয়া হয় না। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ভর্তিকৃত প্রায় রোগীরা জানান, দুপুরে এবং রাতে যে খাবার দেয়া হয় তাতে তরকারি মাছ বা মাংসের পরিমাণ নেই বললেই চলে। ভাত যা দেয়া হয় তাতে পেটই ভরেনা‌। রোগীপ্রতি অর্থ বরাদ্দ নয়, খাদ্যের চাহিদার হিসাব করে বাজেট তৈরি করার এবং রোগীর খাবারের মান যেকোন উপায়ে বজায় রাখা উচিত বলে মনে করেন পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সদ্য বিদায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশিষ্ট চিকিৎসক। মানসম্মত ও প্রয়োজনানুসারে খাবার না দিলে রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করেন ওই চিকিৎসক। 

তিনি জানান, এই হাসপাতালে অফিস সহকারী ইসমাইলের নেতৃত্বে চলে সব কিছু। ইসমাইল নিজেকে ভালো মানুষ দাবি করলেও এই হাসপাতালে অধিকাংশ দুর্নীতি হয় তার ইশারায়। ভূয়া টেন্ডার, বেতন বিল থেকে শুরু করে এমন কোন বিভাগ নেই যে যা অফিস সহকারী ইসমাইলের দুর্নীতির ছোঁয়া লাগেনি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, তার কারনে অতিষ্ঠ অনেক চিকিৎসক, নার্স এবং এই হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। তদন্ত করলে তার সব দুর্নীতি বের হয়ে আসবে বলেও জানান ওই সদ্যবিদায়ী চিকিৎসক। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন পরশুরাম স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী ইসমাইল। ইসমাইল জোর দিয়েই বলেন, সরকারি হাসপাতালের রোগীদের খাবারের পেছনে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া থাকে। খাদ্যের ক্যালরি হিসাব করে খাবারের তালিকাও নির্ধারিত হয়ে থাকে। অনেক মানুষের জন্য রান্নাকৃত খাবারের মান বাড়ির খাবারের তুলনায় কিছুটা নিম্নমানের হতেই পারে। তবে এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেকৃত অপরাধ হতে পারে না। রোগীদের খাবার নিয়ে কেউ কারচুপি করতে পারেন না। খাবারের মান তদারকি করার জন্য আলাদা টিম কাজ করে বলে দাবি করেন অফিস সহকারী ইসমাইল।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, হাসপাতালে সরবরাহকৃত খাবার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব হাসপাতালে যারা খাবার সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের পকেটেই চলে যায় সিংহভাগ অংশ।

এই ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুদুল খালেকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বিভিন্ন অজুহাতে দেখিয়ে সময় ক্ষেপন করেন। এসময়ে তিনি পরে যোগাযোগ করার কথা জানিয়ে দেন।