শহরর প্রতিনিধি->>

ফেনীতে শিখো-প্রথম আলোর উদ্যোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় সাড়ে সাতশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

রোববার সকাল ১০টার দিকে জেলা শিল্প কলা একাডেমি মিলনায়তনে আনন্দ মুখর পরিবেশে এ উৎসব শুরু হয়। উৎসবের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন ফেনী বন্ধুসভার সদস্য ও ন্যাশনাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো.মোক্তার হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মেধার কোন সীমানা নেই। পাহাড় সমান স্বপ্ন নিয়ে জীবনে গড়ে তুলতে হবে। এমন স্বপ্ন দেখবে,যে স্বপ্ন তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। ভালো ছাত্র হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া উত্তম। এমন কোন কাজ করবেনা যেটি অন্যের জন্য ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, ভালো নাগরিকের গুণাবলী হচ্ছে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কাজ করা। মাদক ও সামাজিক অবক্ষয় থেকে নিজে দুরে থাকা, অন্যকে দুরে রাখা। সাইবার বুলিং এড়িয়ে চলা। একজন মানুষ যতোই মেধাবী হোক। কিন্তু ভালো নাগরিক না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য প্রত্যেক মানুষকে ভালো নাগরিক হওয়া জরুরি। একজন সুনাগরিককে দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হবে। এটাই আমরা তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করি।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,মোবাইলের আসক্তি পরিহার করতে হবে। একজন ভালো ছাত্র ও আদর্শ নাগরিক হতে হলে প্রতিনিয়ত দার্শনিক, কবি সাহিত্যেকের গল্প ও কবিতাসহ বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। তোমরা আগামীর কর্ণধার। আমরা তোমাদেরকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। একটি উপহার যতই ছোট হোক না কেন, সেটিকে খাটো করে দেখা যাবে না। তোমরা জীবনে যত বড় হউ। মনে রাখবে জীবনের প্রথম ধাপে প্রথম আলো তোমাদেরকে একটি সম্মাননা দিয়েছে। যা তোমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সবাইকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার আহবান জানান।

শরতের সকালে রোদ্রউজ্জল পরিবেশে রোববার সকাল থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উৎসব প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা। উৎসবে অংশ নিতে জিপিএ–৫ পাওয়া ৭৪৪জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী নাজিফা তাবাসসুম। মায়ের সঙ্গে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছে সে। নাজিফা বলে, ‘আমি অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলাম। এ রকম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। আমি খুবই আনন্দিত।’

জেলার সোনাগাজী উপজেলার চর সাহাভিকারী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে আবদুর রহমান। সংবর্ধনা নিতে এসে আবদুর রহমান বলে, সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠানে এসেছে। ‘এত বড় আয়োজন দেখে অনেক ভালো লাগছে। শত শত শিক্ষার্থীর মধ্য এভাবে সংবর্ধনা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।’ আয়োজনের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানায় সে।

দুই ঘন্টাব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ক্রেস্ট, অনলাইনে সার্টিফিকেট, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস। উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিতে উৎসব প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন জেলার গুণী শিক্ষক ও প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীরা।

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে অনুষ্ঠানস্থল কানাই কানাই পূর্ণ হয়ে যায়।

প্রথম আলো ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে ও বন্ধুসভা সহসভাপতি বিজয় নাথ এবং পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক জান্নাত আক্তারের যৌথ সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিতে উৎসবে বক্তব্য দেন, ফেনী সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.মোশাররফ হোসেন, ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগম, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জাফর উদ্দিন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন, প্রথম আলোর প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলো ফেনী বন্ধুসভার সদস্য ও আর্য্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।এতে শতশত শিক্ষার্থীরা গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাওসার হামিদ আল মাসুম, আরাফাত হোসেন, তাহিয়া তাহসিন, সুশান্ত নাথ, পুষ্পিতা দাস গান ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেছে।