বিশেষ প্রতিবেদক->>

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে এক মাস ধরে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন ফ্লুজনিত রোগীর অস্বাভাবিক চাপ দেখা দিয়েছে। বহির্বিভাগ ও শয্যায় অতিরিক্ত রোগীর চাপ নিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে বহির্বিভাগে কোনো কোনো চিকিৎসককে ৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়। রোগীর দীর্ঘ সারি থাকায় দেড় থেকে ২ মিনিটের মধ্যে তড়িঘড়ি ব্যবস্থাপত্র লিখে দিতে হচ্ছে। বিষয়টিকে অস্বস্তিকর মনে করছেন চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনরা। এ অবস্থায় জেলার সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটিতে দ্রুত বহির্বিভাগের চিকিৎসকের পদায়ন জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে সপ্তাহের ছয় দিন ১০ জন মেডিকেল অফিসার ও ১১ জন কনসালট্যান্ট নিয়মিত রোগীর ব্যবস্থাপত্র দেন। হাসপাতালে কনসালট্যান্ট পর্যায়ের চিকিৎসকরা অপারেশনসহ অন্যান্য কাজে জড়িত থাকায় প্রতিদিন পাঁচ-সাতজনের বেশি বহিবির্ভাগের রোগী দেখার সুযোগ পান না।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে বহিবির্ভাগের রোগীদের নিবন্ধন নেয়া হয়। নিবন্ধন কক্ষ থেকে নির্ধারিত কক্ষের সামনে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পান রোগীরা। অপেক্ষমাণ রোগীদের সারি দীর্ঘ হওয়ায় চিকিৎসক রোগীর রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত শোনার সুযোগ পাচ্ছেন না। তার পরও ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেয়া হচ্ছে নানা ওষুধের নাম। চিকিৎসককে রোগের বিষয়ে বিস্তারিত অবহিত করার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে রোগী ও স্বজনের মাঝে ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা তড়িঘড়ি ব্যবস্থাপত্র লেখার মাঝে ভুল চিকিৎসার আশঙ্কা করছেন। চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই জ্বর-সর্দি ও এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।  

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগের ১০২ ও ১০৩ নং কক্ষে রোগীর অতিরিক্ত চাপ ছিল। শনি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন দুটি কক্ষে ১৫০-১৬০ জনের অধিক রোগী দেখতে হয়েছে চিকিৎসকদের। শুধু তাই নয়, সপ্তাহের শুরুর দিকে শিশু বিভাগে এক চিকিৎসক একদিনে ২২০ জনকে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। এছাড়া গত সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই ফেনী জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে নয় শতাধিক রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে দায়িত্ব পালনকারী মেডিকেল অফিসারদের মাঝে অস্বস্তি ও ক্লান্তি দেখা দিয়েছে। একই সময়ে কনসালট্যান্টদের কক্ষেও রোগীর চাপ বেড়েছে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ ইকবার বলেন, ‘একজন চিকিৎসক দায়িত্বকালীন সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন রোগী দেখতে পারেন। এর চেয়ে বেশি রোগী দেখতে গেলে একদিকে চিকিৎসকের ওপর চাপ পড়ে, অন্যদিকে রোগী ও স্বজনরাও অতৃপ্তিতে ভোগেন। অতিরিক্ত রোগী দেখতে গিয়ে ভুল চিকিৎসারও আশঙ্কা দেখা দেয়।’

তিনি আরো বলেন, আশপাশের জেলার সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকার কারণে ফেনীর এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ভেতরে সবসময় রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকে। তার মধ্যে গত এক থেকে দেড় মাস ভ্যাপসা গরমে শিশু, বয়স্ক মানুষের মাঝে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। মানুষ বারবার জ্বর-সর্দি, এলার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে। যার কারণে বহির্বিভাগে রোগীর অতিরিক্ত চাপ দেখা দিয়েছে।’