ওপার বাংলা, পরশুরাম, ফেনী, স্পেশাল | তারিখঃ May 22nd, 2023 | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 10636 বার

নাজমুল হক শামীম->>
ফেনীর বিলোনিয়া স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজের দুই তৃতীংশ কাজ বাকি রেখেই (বিএসএফ’র বাধায়) রোববার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। যদিও কোন স্থাপনা তৈরী ছাড়াই ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর ঘটা করে এ বন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহাজাহান খাঁন।
এক স্থলবন্দর দু’বার উদ্বোধনের বিষয়ে প্রতিবেদকের প্রশ্নে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আপনি সাংবাদিকতা করছেন ভালকথা, সেদিন শাহাজাহান খাঁন সরকারী সিদ্ধান্তে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। শুল্ক বন্দরকে স্থলবন্দর করে গেজেট হলেও বন্দর হিসেবে উদ্বোধন হয়নি। ২০০৯ সালের সিদ্ধান্ত আজ বাস্তবায়িত হয়েছে।”
এদিকে প্রায় ৭০ভাগ নির্মাণকাজ বাকি রেখে উদ্বোধনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিএসএফ’র বাধার কারনে কিছু কাজ বাকি আছে। তাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক হয়েছে আরো বৈঠক হবে আশাকরি শীঘ্রই এর স্থায়ী সমাধান হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী-১ আসনের (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) সংসদ সদস্য শিরীন আখতার, ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান, ফেনী-৪ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্ণেল রাকিবুল হাসান, ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান, পরশুরাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার, পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী (সাজেল)। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগ্ম কমিশনার কাস্টমস এবং প্রকল্প পরিচালক ডিএম আতিকুর রহমান।
এসময় মঞ্চে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ৪টি স্থল বন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যানেজার দেবাশীষ নন্দি, ফেনীর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. বাবুল ইকবালসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি মালামাল সংরক্ষণ ও পার্কিং সুবিধা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস এবং আবাসন সুবিধাসহ বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা। অধিগ্রহণ করা হয় ১০ একর জমি।
এর আগে কোনরকম স্থাপনা তৈরী ছাড়া ২০০৯ সালে বিলোনিয়া স্থলবন্দর উদ্বোধন হলেও ২০১৯ সালে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণে কাজ শুরু হয়। নকশার মাত্র ৩০ শতাংশ অংশ দেড়শ গজের বাইরে থাকায় কাজ করা সম্ভব হয়। কিন্তু বাকি ৭০ শতাংশের কাজ দেড়শ গজের ভেতরে থাকায় বিএসএফের বাধায় বন্ধ হয়ে যায়। এই নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একাধিক বার দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে কোন সুরাহা হয়নি।
নাম ও পদবি প্রকাশে অনিচ্ছুক বিলোনিয়া স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের এখনো ৭০ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা বিরোধ সংক্রান্ত জটিলতার কারনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র বাঁধার কারণে বাকী কাজ করা সম্ভব হয়নি।
বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, দুই তৃতীংশ কাজ বাকী রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবকাঠামো রয়েছে তা দিয়েও বন্দর কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হবে।
স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর জানায়, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বিলোনিয়া স্থলবন্দরটি সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ১০ একর জমিতে ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, একটি ওয়্যারহাউজ, ট্রান্সশিপমেন্ট শেডসহ একটি অফিস ভবন, একটি ডরমিটরী ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বন্দরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপন, টয়লেট কমপ্লেক্স ও আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের সঠিক পরিমাপের লক্ষ্যে ১০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ডিজিটাল ওয়েব্রীজ স্কেল নির্মাণ করা হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে সকল ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যায়। তবে বর্তমানে প্রধানত গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমুল, গাছগাছড়া, বীজ, গম, পাথর (স্টোনস এনড বোল্ডারস), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পিয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ ইত্যাদি আমদানী করা হয়ে থাকে। রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য ও শিশু খাদ্য ইত্যাদি।
বিলোনিয়া স্থলব্দর শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, দীর্ঘদিন পর বিলোনিয়া স্থল বন্ধর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারনে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।
বিলোনিয়া স্থলবন্দরের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে ২০০১ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। স্থলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঠিক দিক নির্দেশনায় ২৪টি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এসকল স্থলবন্দরের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪টি স্থলবন্দরের উন্নয়ন সম্পন্ন করে অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ফেনীর পরশুরামের ‘বিলোনিয়া স্থলবন্দর’ একটি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, স্থলবন্দর চালু হলে শুধু ব্যবসা বাণিজ্য নয়, দুই দেশের সম্পর্কও উন্নয়ন হবে। দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ বাড়বে।
এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক নিউজ সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া সীমান্ত এলাকায় ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খাঁন প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার আমদানি- রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সিদ্ধান্তে বিলোনিয়া স্থলবন্দরটি চালু করা হলেও স্থলবন্দরটি উদ্বোধনের পর থেকে একমূখী বাণিজ্য কার্যক্রম চালু রয়েছে। শুধুমাত্র ভারতে রপ্তনী কার্যক্রম চলছে। ইতিপুর্বে স্থানীয় আমদানি রপ্তানী কারকদের দাবির পেক্ষিতে এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্বান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের শেষ দিকে আমাদানি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে কয়েক সপ্তাহ পেঁয়াজ আমদানি হলেও ডলার সংকটসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে আমদানি কার্যক্রম ফের বন্ধ রয়েছে।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- আমাদের নিজেদের অর্থ-শ্রম দেশের কাজে লাগালে দেশের আরও উন্নয়ন হবে: জেলা প্রশাসক
- ফেনীতে যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশ
- সংস্কৃতি খাতে বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবিতে ফেনীতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সমাবেশ
- ফেনীতে গাঁজাসহ দুই রোহিঙ্গা যুবক আটক
- ফেনীতে জাল সনদে শিক্ষকতা, দুই শিক্ষক চাকুরীচ্যুত
- ফেনীতে বজ্রপাতসহ স্বস্তির বৃষ্টি
- সোনাগাজীতে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু
- ৬ দফা দিবসে ফেনীতে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা ও সমাবেশ
- ছাগলনাইয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
- সোনাগাজীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের অভিযোগ
Leave a Reply