বিশেষ প্রতিনিধি->>

ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৬ আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া রায় ঘোষণার পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ আদালতে শুরু হয়নি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের শুনানি। আলোচিত হত্যাকাণ্ডটির ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় একরামুল হককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই দিন এ ঘটনায় ফেনী সদর মডেল থানায় মামলা করেন একরামের বড় ভাই জসিম উদ্দিন। মামলায় ফুলগাজীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। এর মধ্যে এক আসামি র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ মামলার রায়ে ৩৯ জনকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান বিএনপির নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ ১৬ জন। রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে একরামকে হত্যা করা হয়েছে।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ফেনী পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর আবদুল্লাহ হিল মাহমুদসহ ২৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন, পলাতক ১৬ জন।

পলাতক আসামিরা হলেন জাহিদ হোসেন, আবিদুল ইসলাম, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন, আরমান হোসেন, জাহেদুল হাসেম, জসিম উদ্দিন, এমরান হোসেন, রাহাত মো. এরফান, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান, কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মোসলে উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন, মহিউদ্দিন আনিছ, মো. বাবলু ও টিটু। এর মধ্যে চারজন জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর পালিয়ে যান। পলাতক ও কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত সব আসামিই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে ফেনী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আটকে আছে আপিল শুনানি

জেলা জজ আদালতে রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা। রায়ের পাঁচ বছর পার হলেও তাঁদের সেই আপিলের শুনানি হয়নি।

ফেনী আদালতে নিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহম্মদ বলেন, পেপারবুক প্রস্তুত না হওয়ায় আসামিদের আপিলের শুনানি শুরু হয়নি। মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, জব্দ তালিকা, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও নিম্ন আদালতের রায় পর্যায়ক্রমে পেপারবুকে সাজানো থাকে।

নিহত একরামের ছোট ভাই মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। রায় কার্যকরে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’