বিশেষ প্রতিনিধি->>

গত কয়েক বছর ফেনী জেলার নদনদী ও ভূগর্ভস্থ পানি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ব্যয় বাড়ছে। এ ছাড়া নদীতে পানি না থাকায় এই জেলার মৎস্যজীবীরাও সংকটে পড়ছেন। দেশি প্রজাতির মাছের স্বাদ বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশ কয়েক মাস ধরে বৃষ্টি না থাকায় ও ভারত থেকে পানি না আসায় পানিশূন্য হয় পড়ছে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদী। মুহুরী নদীর ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়া গ্রাম থেকে পরশুরাম পর্যন্ত পানি শুকিয়ে গেছে। নদীর বেশ কিছু অংশ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে সিলোনিয়া নদীর ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া ব্রিজ অংশের পূর্ব-পশ্চিম পাশে দেড় কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছাড়া বাকি অংশে পানি নেই। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় এবং খনন না হওয়ার কারণে নদীর পানি ভূগর্ভে যেতে পারছে না। ফল ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নিচে নামছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, মুহুরী নদী ও সিলোনিয়া নদীর তলা শুকিয়ে যাওয়ার এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার সিলোনিয়া ও মুহুরী নদী ঘুরে দেখা গেছে, ভারত থেকে পানি আসছে না। দুটি নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। মুহুরী নদী অংশের ফুলগাজীর দেড়পাড়া গ্রাম থেকে পরশুরাম পর্যন্ত পানি শুকিয়ে মাটি দেখা যাচ্ছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এদিকে সিলোনিয়া নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুপাশে নিলক্ষী, গোসাইপুর, করইয়া, শ্রীবউরা, নোয়াপুর, কামাল্লা, রাজেশপুর, মনতলা, গাবতলা, মান্দারপুর ও পৈথারা গ্রামের হাজারও কৃষক বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। পানির অভাবে মাঠে ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে।

সিলোনিয়া নদী ও মুহুরী নদীর বেশ কিছু অংশ পানি শুকিয়ে তলা দেখা যাছ। পরিণত হয়েছে ছোট নালায়। নদীর বেশিরভাগ অংশজুড়ে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, নদীগুলো মরা খালের মতো হয়ে গেলেও বর্ষাকাল সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি উপচে আশপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

ফুলগাজী উপজেলার গোসাইপুর গ্রামের কৃষক আবু আহম্মদ বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে এই জায়গায় আমরা কৃষিকাজ করছি। পাঁচ বছর আগেও সিলোনিয়া নদীর পানি দিয়ে আমরা সেচ পানি দিতাম। এবার মাঠের কৃষি জমির ধান শুকিয়ে গেছে। তিনি জানান, এ মৌসুমে দুই একর জমিতে তিনি বোরো ধান চাষ করছেন। অর্ধেক ফসলও পাবেন কি না, তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।

ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। খননের মাধ্যমে নাব্য বাড়ালে জলাধারের আয়তন বাড়বে। এটি স্থানীয় কৃষকদের সেচের ফসল উৎপাদন সহায়ক হবে।

পানি উনয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আখতার হোসেন জানান, মুহুরী নদীর তলা শুকিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে কখনো হয়নি। এটি একটি বিরল ঘটনা। বিশেষ করে ভারত থেকে পানি না আসায় মুহুরী ও সিলোনিয়া নদী পানিশূন্য হয়ে গেছে।