ফুলগাজী প্রতিনিধি->>

ফুলগাজী উপজেলার ইউএনও অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নুরুল হকের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সব স্তরের মানুষের। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিবন্ধন সংশোধন করতে গেলে কর্মকর্তা নুরুল হকের চাহিদামতো টাকা না দিলেই পড়তে হচ্ছে ব্যাপক ভোগান্তিতে।

সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীসহ সবার বাধ্যতামূলক জন্মসনদ করে দাপ্তরিক কাজে জমা দিতে হচ্ছে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করছেন অনেকে। এটি করতে ফুলগাজী ইউএনও অফিসে জমা দিতে হয়। এটি গ্রহণের দায়িত্ব পড়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নুরুল হকের হাতে। তিনি ছয়টি ইউনিয়নের সব সংশোধনের একমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। তাই একেকজনের দুটি, তিনটি পাঁচটি বা সাতটা করে জন্মনিবন্ধন সংশোধনী করতে হয়। পরিবারের সদস্য অনুযায়ী হয়তো দেখা যায় কারও পরিবার সদস্য বেশি থাকলে পাঁচটি সংশোধনী করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি সংশোধনের জন্য এক শ বা দুই শ করে টাকা নগদে দিতে হয়। এতে শ্রমজীবী, প্রবাসী কেউই তাঁর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। যে টাকা দেয় না তার সংশোধনের কাগজ ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত আটকে রাখে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

ফুলগাজী ইউএনও অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ছয়টি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ জন্মনিবন্ধন সংশোধনী নিয়ে আসে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে এতটুকু সহযোগিতা পায় না। সে ভিক্ষুক হোক বা দিনমজুর—সবাইকে টাকা দিয়ে জন্মনিবন্ধনের কাজ করতে হয়।

জন্মনিবন্ধন সংশোধনী করতে আসা উপজেলার গোসাইপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ (৫৫) নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি চারটি জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ইউএনও অফিসের দোতালায় ২০৭ নম্বর কক্ষে যান। সেখানে গেলে তাঁর কাছ থেকে সংশোধনের জন্য ৪০০ টাকা দাবি করেন কর্মকর্তা নুরুল হক। যখন তাঁকে বলা হয় তিনি একজন দিনমজুর, তার কাছে টাকা নেই। চারটি সংশোধনের জন্য কিছু টাকা কম রাখতে বললেও ওই কর্মকর্তা ৪৫০ টাকা দিতে হবে দাবি করেন। পরে ৪০০ টাকা দিয়ে আসতে হচ্ছে। কিন্তু এ টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হয় নাই।

উপজেলার বৈরাগপুর গ্রামের রিনা বেগম জানান, তার ছেলে-মেয়ের তিনটি জন্মনিবন্ধন সংশোধন করার জন্য নুরুল হকের কাছে এলে সে তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে নেন। এই ৩০০ টাকার কোনো রশিদ দেওয়া হয়নি। এই ৩০০ টাকা কেন নেওয়া হয়, এমন প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি অফিস খরচ বলে তাকে বের করে দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুরুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। যাদের জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে দিতে দেরি হয়, তারা মিথ্যা অভিযোগ করে। আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নিই না। এটা হয়তো মিথ্যা বলছে। একপর্যায়ে তিনি দ্রুত ফোন কেটে দেন।’

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ মন্জুরুল ইসলাম জানান, অনিয়ম নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত চলমান রয়েছে। অভিযোগের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।