image

নাজমুল হক শামীম, ৬ জানুয়ারি>>

ফেনীতে রাজনৈতিক সংঘাত চলাকালে ককটেল বিস্ফোরনে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর চোখ হারানোর আশংকায় উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলছে। দুই পরিবারেরই মা-বাবার একমাত্র ছেলে অনিক ও হৃদয় ককটেলের স্প্রিন্টারে চোখ হারিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছে। ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের কথা ছিলো মেধাবী এ দুই ছাত্রের। গত সোমবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে শহরের ট্রাংক রোডের জিরো পয়েন্টে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের ছোড়া ককটেলে তারা গুরুত্বর আহত হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত মিনহাজুল ইসলাম অনিককে (১৬) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও শাহরিয়ার হৃদয়কে (১৫) চট্রগ্রামের পাহাড়তলীর চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত মিনহাজুল ইসলাম অনিককে মা জেসমিন আক্তার জানান, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকড়া ইউনিয়নের আলকড়া গ্রামের হাজি বাড়ির মিজানুর রহমানের ছেলে অনিককে ভাল পড়ালেখা করার জন্য ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ছেলের পড়ালেখার জন্য তারা শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের আড্ডা বাড়ি এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকছেন। অনিকের ওমান প্রবাসি পঙ্গু বাবা মিজানুর রহমান প্রবাস থেকে উপার্জিত অর্থ ছেলে ও দুই মেয়েদের উন্নত লেখাপড়পার জন্য ব্যায় করছেন। অনিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবেন। পরীক্ষার পূর্ব সময়ে শেষ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অনিক ও তার বন্ধু হৃদয় প্রতিদিনের মতো প্রাইভেট পড়তে বাসা থেকে বের হয়। প্রাইভেট পড়া শেষে রিক্সা করে বাসায় ফেরার পথে রাজনৈতিক সমাবেশ স্থলের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ হলে অনিক ও তার বন্ধু হৃদয়’র মুখোমন্ডল গুরুত্বর জখম হয়। আহত দু’জনকে ফেনী সদর হাসপতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে বর্তমানে হাসপাতালের ১০৩ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অনিকের চোখে, কপালে ও মাথায় ককটেলের স্প্রিন্টার ঢুকে পড়েছে। চিকিৎসকরা স্প্রিন্টারগুলো বের করার চেষ্টা করছে। স্প্রিন্টারের আঘাতে অনিকের ডান চোখের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মা বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে লেখাপড়া করিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে আজ তার ছেলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে পাঞ্জা লড়ছে। তিনি ছেলের এই নির্মম পরিস্থিতির জন্য দোষিদের কঠোর স্বাস্তির দাবি করেছেন।
এদিকে অনিকের বন্ধু শাহরিয়ার হৃদয়’র বাবা আবুল খায়ের জানান, হৃদয়ের ডান চোখে ককটেলের স্প্রিন্টার ঢুকে পড়ায় তার চোখে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চট্রগ্রামের পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের ৩ নং ওয়ার্ডের ৩০ নং বেডে ভর্তি থাকা হৃদয়ের ক্ষতিগ্রস্থ চোখটিতে মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন হৃদয়ে ক্ষতিগ্রস্থ চেখে আর আলো দেখার সম্ভাবনা নেই। চোখ ছাড়াও হৃদয়ের মাথায় ও মুখে একাধিক স্প্রিন্টার ঢুকে পড়েছে। কুয়েত প্রবাসী আবুল খায়ের একমাত্র ছেলের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ দেয়ার জন্য ৪ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। জেলার দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের আবদুর রব মেম্বার বাড়ি ছেলে আবুল খায়ের একমাত্র ছেলে হৃদয় ও বড় মেয়ের পড়ালেখার সুবিধার্তে শহরের রামপুর ভূঞা বাড়ি এলাকার ‘ইটালি ভবনে’ ভাড়া বাসায় থাকছেন। ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর অদম্য আশায় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি করিয়েছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার চুড়ান্ত সময়ে এমন একটি ঘটনায় তিনি ও তার স্ত্রী বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। তিনি ছেলের এই করুন পরিস্থিতির জন্য দেশের বিবেকহীন রাজনীতিবিদদের ধিক্ষার জানান।
অপরদিকে আহত দুই শিক্ষার্থীর চিকিৎসার্থে ফেনী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া তাদের চিকিৎসার্থে আরো অর্থ ব্যায় হলে তাও দিতে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার দুপুরে হামলার নিন্দা জানিয়ে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির ব্যক্তব্যে তিনি এমন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিনুজ্জামান জানান, ককটেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ অনিকের মামা শহিদুল ইসলাম মানিক বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে মঙ্গলবার দুপুরে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে এ মামলায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।