শহর প্রতিনিধি->>

ফেনীতে মিছবাহুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের থেকে পড়ে হেফজ বিভাগের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় করা আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুছকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রোববার ফেনীর জুডিশিয়াল আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মারা যাওয়া ছাত্রের নাম মো. ইসরাফিল ইফাদ (১৪)। সে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথ ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের প্রবাসী মো. ইয়াছিনের ছেলে। তার পরিবার ফেনী শহরে থাকে।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রহিম সরকার বলেন, ওই ছাত্রের বড় ভাই বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। মামলার পর পুলিশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। শুনানি পরে অনুষ্ঠিত হবে।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরাফিল ইফাদ চার বছর ধরে এ মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল। ইতিমধ্যে সে ২৬ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেছে। ওই মাদ্রাসা ভবনের চতুর্থ তলায় একটি বিশাল কক্ষে ৪ জন শিক্ষক ও ৮০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকতেন। ভবনের পঞ্চম তলায় শৌচাগার। ষষ্ঠ তলা নির্মাণাধীন, শুধু ছাদ হয়েছে। তবে ষষ্ঠ তলার ছাদের চারপাশে চার ফুট উঁচু লোহার রেলিং দেওয়া আছে।

ইসরাফিলের এক স্বজন মো. ইলিয়াছ জানান, প্রায় ১৩-১৪ দিন আগে ইসরাফিলকে মাদ্রাসার এক শিক্ষক বাজার থেকে ডিম কেনার জন্য ৫০০ টাকা দেন। নিজের পকেটে থাকা আরও কিছু টাকাসহ ডিম কেনার সেই টাকা হারিয়ে ফেলে ছেলেটি। টাকা হারিয়ে ভয়ে ওই দিন সে মাদ্রাসায় আর ফিরে যায়নি। পরে তার মা তাকে বাসায় নিয়ে রাখেন। ১৪ মে ইসরাফিলকে আবার মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিক্ষকেরা তাকে রাখতে চাননি। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত মুচলেখা দিয়ে তাকে মাদ্রাসায় রেখে আসা হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোর পৌনে চারটার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঘুম থেকে উঠে পঞ্চম তলায় শৌচাগারে যান। ফজরের নামাজের পরই হেফজ বিভাগের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। ইসরাফিল ও তার এক বন্ধু শৌচাগার থেকে বের হওয়ার পর ছয়তলায় শুকাতে দেওয়া জামাকাপড় আনার জন্য যেতে চায়। তবে ছয়তলার সিঁড়ি অন্ধকার দেখে ওই বন্ধু আর যায়নি। ইসরাফিল একাই ছয়তলায় যায়। এরপর মাদ্রাসা ভবনটির নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। মাদ্রাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে একা ছাদে উঠতে দেখা গেছে। কীভাবে সে নিচে পড়েছে, তা কেউ বলতে পারেননি।