বিশেষ প্রতিবেদিক->>

পরশুরাম উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও পাকা ধানে পোকার আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জমি থেকে যখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক সেই সময়েই দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ।

হঠাৎ পাকা ধানে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণে মুহূর্তের মধ্যে পাকা ধান সাদা হয়ে যাচ্ছে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এই রোগকে গুনগুনির আক্রমণ বলে দাবি করছেন।

স্থানীয় কৃষক আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, কীটনাশক স্প্রে করেও দমন করা যাচ্ছে না পোকার আক্রমণ। এক জমি থেকে আরেক জমিতে পোকার আক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় কৃষকেরা এই পোকার নাম গুনগুনি পোকা বললেও পরশুরাম উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন বাদামি গাছ ফড়িং। বাদামি গাছ ফড়িং মূলত পাকা ধানেই আক্রমণ করে। এই পোকা প্রথমে ধানের শিষের কচি ডগার রস চুষে খায়। ফলে ওই ধানের শিষ ২/৩ দিনের মধ্যেই মরে সাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এই পোকার আক্রমণ এতটা ভয়াবহ যে ধান কেটে নেওয়ার পরও এই পোকার সংক্রমণ হচ্ছে।

উপজেলার মির্জানগর, চিথলিয়া. বক্সমাহমুদ এবং পৌর এলাকার কয়েকটি গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের এমন দুঃখ-দুর্দশার চিত্র দেখা যায়। এ সময় কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে।

উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামের কৃষক মাধু মিয়া জানান, আমার বেশির ভাগ জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বাজারের দোকান থেকে কীটনাশক স্প্রে করছি, এতে কাজ হচ্ছে না। সব ধান মরে সাদা হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের লোকজন কি পরামর্শ দিয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষি অফিসের কোনো লোকজনকে তিনি কখনো দেখেননি।

মির্জানগর ইউনিয়নের গ্রামের কৃষক মো. হানিফ বলেন, ‘আগামী সপ্তাহ থেকে ধান কাটার নিয়ত করেছি। সকালে জমিতে এসে দেখি পোকায় পাকা ধান খেয়ে ফেলছে, কী করি ভেবে পাচ্ছি না। বাজার থেকে কীটনাশক এনে স্প্রে করছি।’

পরশুরাম পৌর এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেব রঞ্জন বণিক জানান, কিছু কিছু এলাকায় পাকা ধানে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন। এর কারণে কৃষকদের ওষুধ ছিটানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনছুর আহাম্মদ জানান জানান, ভারতের সীমান্ত এলাকা জুড়ে লাইটিং, স্যাঁতসেঁতে জমিতে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি এবং ধানের চারা ঘন ঘন লাগানোর ফলে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। পাকা ধানে প্লেনাম, মিফসিন, নাইট্রো নামের ওষুধ পরিমাণ ও সময়মতো ছিটালে বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ থেকে পাকা ধান রক্ষা পাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, যে জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে সেখানে কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যায় কৃষকেরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাসুদ রানা জানান, পরশুরাম উপজেলায় চলতি বছর ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে ব্লাস্ট ও বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।