image

এম রহিম উল্যাহ বাবুল,২০ নভেম্বর->>

সারা দেশের মত ফেনী জেলারমাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোও এখন এস এস সি পরীক্ষার অন্তভুক্তি ফরম পূরণ নিয়ে ভীষন ব্যস্ত। সব স্কুলই ইতিমধ্যে নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে। সব বিষয় পাস, ১ বিষয় ফেল, আরো অধিক বিষয় ফেল প্রভৃতি নানা ধাপে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
সবশেষে এখন চলছে প্রভাবশালী মহলের বিশেষ তদবীরে পার পাবার চেষ্টারত ৮-১০ বিষয় ফেল করা শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের প্রাণান্তকর চেষ্টা। ফেনী জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় অঙ্গন এখন অভিভাবক ও সম্ভাব্য এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর। কেউ যাচ্ছে ফলাফল জানতে, কেউ যাচ্ছে টাকার পরিমান জানতে, কেউ যাচ্ছে অন্যান্য দেন দরবার করতে।
স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদেরও এ নিয়ে ক্লান্তিকর ব্যস্ততা। এ বছর বিলম্ব ফি ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর গত কাল ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এবং বিলম্ব ফি দিয়ে আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণের টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫ শত টাকার মধ্যে একজন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করার কথা থাকলেও সর্বনি¤œ ৫ হাজার টাকার নিচে বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী ফরম পূরণের সুযোগ পাচ্ছে না। নির্ধারিত অংকের সর্বনি¤œ তিন চার গুণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে সাত আট গুণ বেশি টাকা দিয়েই ফরম পূরণ করতে বাধ্য হচ্ছে পরীক্ষার্থীরা। খোদ ফেনী শহরের নামি দামী স্কুল গুলোতেও চলছে টাকা আদায়ের প্রতিযোগিতা। কোন স্কুল আদায় করছে সাড়ে চার হাজার টাকা আবার কোন স্কুল আদায় করছে সাড়ে সাত হাজার টাকা। নিয়ম নাই, নীতি নাই, সমন্বয় নাই, নাই কোন প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতা।
যে যার মত করে টাকার অংক দাঁড় করাচ্ছে। টিউশন ফি, দিবা কোচিং, নৈশ কোচিং, বৈকালীন কোচিং, বিশেষ কোচিং, শিক্ষক কল্যাণ, স্কুল উন্নয়ন, যাতায়াত, মিলাদ, আপ্যায়ন ইত্যাদি নানা খাত দাড় করিয়ে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এস.এস.সি পরীক্ষার বাড়তি ফি আদায় করা থেকে বিরত থাকার জন্য মাননীয় হাই কোর্ট থেকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ১০ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে পরের দিন ১১ নভেম্বর স্বত:প্রনোদিত হয়ে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে এবং পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব ও আট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তারপরও থামেনি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের তৎপরতা। আবার এমন তথ্যও আছে যে, একটি স্কুলের একজন বিত্তবান প্রভাবশালী অভিভাবকের সন্তান ভৈবব গুণে মাত্র ২ হাজার টাকায় ফরম পূরণ করতে পারলেও নিরীহ কিন্তু মেধাবী হয়েও অন্য একজনকে দিতে হয়েছে চার হাজার তিনশত টাকা। আবার কোন কোন স্কুলে অধিক বিষয় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে লজ্জাস্কর ও অনৈতিক ভাবে নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করলেও আসন্ন এস.এস.সি পরীক্ষায় অব্যশই পাস করবে মর্মে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর এবং ৫-১০ হাজার বা আরো বেশি পরিমান টাকা জামানত হিসাবে নেয়া হচ্ছে। তবে অতীত ইতিহাস রয়েছে যে,
এসব শিক্ষার্থী পাস করলেও তাদের জামানতের টাকা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উধাও হয়ে চলে যায় খাদক নদীর বক্ষে! আর ফেল করলে তো আপিল অযোগ্য দন্ড বহাল থাকবেই। অনেক শিক্ষার্থী টাকার জন্য ফরম পূরণ করতে সংকটে পড়লেও তথ্য রয়েছে যে, দাগনভূঞা উপজেলার কোন এক উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির জনৈক সদস্য বিদেশ থেকে ভাই টাকা পাঠালে দেয়ার শর্তে বোর্ড ফি সহ সম্পূর্ণ টাকা বকেয়া রেখেই নিজের ছেলে ও প্রবাসী ভাইয়ের মেয়ের ফরম পূরণ করিয়ে ফেলেছেন।
এত অনিয়ম, এত গরমিল, এত সমন্বয় হীনতা, এত অনভিপ্রেত প্রভাব-প্রতিপত্তি এগুলোর ব্যপারে ফেনী জেলার বিভিন্ন স্কুলের কয়েক জন প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিক প্রতিষ্ঠান, এখানে স্থানীয়দের প্রভাব প্রতিপত্তি থাকবেই। আর দুই একটা স্কুলের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাকে সামগ্রীক ভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। অর্থ আদায় এত ব্যবধান, এত গরমিল কেন তা জানতে চাওয়া হলে কোন কোন উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষক নেতা জানান,
শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্কুল গুলো টাকা আদায় করছে। আবার কেউ কেউ বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটি এবং পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে যৌথ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা অর্থ আদায় করছি। তবে ভূক্ত ভোগী অভিভাবকগণ তা মানতে নারাজ, তাদের কথা যা করার শিক্ষকবৃন্দ বিশেষত প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালনা কমিটিই করছেন।
অভিভাবকদের সিদ্ধান্ত মানা হলে ১ হাজার ৫শত টাকার ফি তারা কেন ছয়-সাত হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে যাবে। সর্বশেষ সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে ফেনী জেলা শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মো: আলাফত আলীর সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, এস.এস.সি ফরম পূরণের নামে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায়ে নানা অনিয়ম ও দুনীতির কথা পত্র পত্রিকায়ও অহরহ দেখা যাচ্ছে।
তবে বোর্ড ফি এর বাইরে অতিরিক্ত কোন অর্থ আদায়ের নিয়ম নাই। যারা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে আপনি কি কোন প্রতিরোধ বা শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার কাছে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেন নাই। দিলে অব্যশই তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।