ডেস্ক রির্পোট->>
আজ মহান বিজয় দিবস।  বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ দিনটির সাথে। এ দিনে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশ নামের নতুন এক রাষ্ট্র। পৃথিবীর ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে ওঠে নতুন এক পতাকা।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি মহান স্বাধীনতার ঘোষক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে নয় মাস সশ্রস্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তার ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো বাঙ্গালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এক অসমান লড়াইয়ে হার মেনে নেয় পৃথিবীর শক্তিশালী এক সামরিক বাহিনী।

বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও তার দোসরদের দীর্ঘ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা, দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার বিনিময়ে এদিন বিজয়ের সূর্য উদিত হয়। যে অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা এ জাতির বুকে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল শেষপর্যন্ত  সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় তারা। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এবারের ক্যালেন্ডারে বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী ।

দীর্ঘ বছর পর একাত্তরের মানবতা বিরোধী যদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে এবং এখনো সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে-এমন সস্তি ও আনন্দ নিয়ে আজ কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের তরে প্রাণ দেয়া বীর সন্তানদের। প্রতিবারের মতোই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে, শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবসের নানা অনুষ্ঠান।  বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্বাধীন বাংলা বেতারের তেজোদ্দীপ্ত গান আকাশ-বাতাসে মুখরিত হবে।

ইতিমধ্যে মহান বিজয় দিবসে ঊপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তববক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল ১০ টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সূত্র: বাসস।