নিজস্ব প্রতিনিধি->>
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার ৩টি ইউপিতে হতদরিদ্রদের চাল বন্টনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগিরা জানান,পরশুরামের মির্জানগর,চিথলিয়া ও বক্রমাহমুদ ইউনিয়নে চাল বিতরণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দমতো তালিকা জমা দিয়েছে। এক্ষেত্রে কোথাও টাকার বিনিময়ে আবার কোথাও সচ্ছল ব্যক্তিদের চালের কার্ড দেয়া হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে কার্ড দেখিয়ে চাল উত্তোলন করে বাড়তি দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত হতদরিদ্ররা সরকারের এই কল্যাণমুখী কর্মসূচির সুফল পাচ্ছেনা। উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সত্যনগর গ্রামের হতদরিদ্র আবুল বশরের নামে ডিলার নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নুরুজ্জামান ভুট্টু। উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে চালগুলো সরাসরি চেয়ারম্যানের স্থানীয় সুবার বাজারস্থ অফিসে রাখা হয় বলে জানা গেছে। এখান থেকে তার ছোট ভাই নুরুল গণি তা বিলি বন্টন করেন। প্রতি কেজি চালে ডিলাররা কমিশন পাবার কথা ১.৫০টাকা। ফলে অধিক মুনাফার লোভে ভুট্টু নিজেই চাল বিক্রি করেন। হিসেবে দেখা গেছে প্রতি মাসে মির্জানগরে শুধুমাত্র ডিলার হিসেবে চেয়ারম্যান ২০ হাজার ৬৫৫টাকা চাল বিক্রির কমিশন পান। মির্জানগর ইউপির ৯ ওয়ার্ডে ৪শ ৫৯ জনকে হতদরিদ্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে এদের প্রায় ৩শ লোক স্বাবলম্বী। এ ইউপিতে হতদরিদ্রদের তালিকায় নাম রয়েছে কোটিপতি সানাউল্লাহ,ইউপি মেম্বার সেলিনা হক ও রেজাউল,প্রবাসী আবুল কালাম এবং মীর হোসেনসহ আরো অনেকের নাম। ফলে তারা ১০ টাকার চাল নেন না। বাকি চাল ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টু আড়তে ২০/২৫ টাকায় বিক্রি করে দেন বলে জানান ভুক্তভোগিরা। এছাড়া চেয়ারম্যান ভুট্টু তার নামে ও.এম.এস সহ একাধিক সরকারি ডিলার নিয়েছেন। তার,ভগ্নিপতি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন যাবত স্থানীয় সুবার বাজারে সারের ডিলার নিয়ে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে গত ৯ অক্টোবর ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্বোধন করা হয়। সূত্র জানায়,সরকারী নীতিমালার তোয়াক্কা না করে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম গোপনে তার পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের ডিলার নিয়োগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরশুরামে বেশিরভাগ ডিলার নিয়োগ পেয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। চিথলিয়া ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ পেয়েছেন ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও যুবলীগ নেতা আবুল কালাম, ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও যুবলীগ নেতা মো: ইয়াছিন। বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে ডিলার নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো: লোকমান হোসেন। এ ইউনিয়নেও কার্ডধারীদের নামের তালিকায় রয়েছে ইউপি সদস্যসহ ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের নাম। অপরদিকে চলতি মাসের অর্ধেক সময় চলে গেলেও চাল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। ঘরে ঘরে আমন উঠতে শুরু করেছে। ফলে মানুষ ১০ টাকার নিতে চাচ্ছেনা। ফলে ডিলাররা চাল নিতে গড়িমসি করছেন । উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, কার্ডধারী ও ডিলারদের তালিকায় বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। তা ঠিক করার পর চাল বিক্রি হবে। এছাড়া পত্রপত্রিকায় লেখালেখির ফলে এবার ৩০ কেজি বস্তায় করে চাল বিতরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বেআইনি হলেও রাজনৈতিক চাপের কারনে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে ডিলার নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে মোট ৪৩ টন ১৭০ কেজি চাল দেওয়া হয়। মির্জানগর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টুর কাছে উল্লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন,হতদরিদ্রদের চালের ডিলার তিনি নেন নি। এর সাথে তার ভাইয়েরও কোন সম্পৃক্ততা নাই। উপজেলা অফিস থেকে তাকে হতদরিদ্রদের তালিকা করার কথা বলা হলে, তিনি মেম্বারদের মাধ্যমে নাম চুড়ান্ত করে তালিকা জমা দেন।